কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ৪৮ হাজারেরও বেশি মানুষ কৃষিকাজের মাধ্যমে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে থাকে। এই অঞ্চলের প্রধান কৃষিপন্য হলো ধান। বন্যা ও বৃষ্টির কারণে বছরের অন্যান্য ফসলের তুলনায় মানুষ বেশির ভাগই বোরো আবাদ করে থাকেন। কিন্ত দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার প্রধান প্রধান খালগুলো খনন না করায় পলিমাটি জমে বেশির ভাগই ভরাট হয়ে গেছে। ভূমি অফিসের কাগজে-কলমে ২০৩টি খাল উল্লেখ থাকলেও দখলদার ও পলিমাটি জমার কারণে বাস্তবে অস্তিত্ব নেই ছোট-বড় অনেক খালেরই।
ভূমিদস্যুরা ড্রেজারের মাধ্যমে অধিকাংশ খাল ভরাট করে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট নির্মান করেছে। ফলে পানি নিঃষ্কাশনের খাল ও নালাগুলো অস্থিত্বহীন হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সামান্য বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় ফসলি জমিতে। অন্যদিকে উজান থেকে ভারতের পানি নেমেও ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয় বোরো ফসলের।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র মতে, বুড়িচংয়ে প্রায় দুই লাখ ৯৯ হাজার লোকের বসবাস। এর মধ্যে ৪৭ হাজার ১৮১টি পরিবারের লোকজন সরাসরি কৃষিকাজের সাথে জড়িত রয়েছে। এ বছর ৯ হাজার ২৬০ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ করা হয়েছে। এর উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৬ হাজার ৫৮৭ মেট্রেক টন। তবে বৃষ্টির পানি নিঃস্কাশনের জন্য যে নালা ও খাল রয়েছে সেগুলো খনন করা না হলে এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করা সম্ভব হবে না।
নাম প্রকাশ না করা শর্তে স্থানীয় একাধিক কৃষক নতুন কুমিল্লাকে জানান, বুড়িচং বাজার সংলগ্ন পশ্চিম পাশের খালটিও ভরাট হয়ে বর্তমানে নালায় পরিণত হয়েছে। এটি পয়াতের জলার পানি নিঃস্কাশনের প্রধান খাল। খালটির দুপাশের বেশির ভাগ জায়গা ভরাট করে বাড়ি ঘর নির্মাণ করা হয়েছে প্রভাবশালীরা। এছাড়া রাজাপুর ইউনিয়নের রাজাপুর পশ্চিম পাড়া এলাকায় খাল ভরাট করে সাবেক মেম্বার জজু মিয়ার ছেলে বাড়ি নির্মাণ করেছে। পূর্ণমতি বাজার সংলগ্ন খালটি মসজিদ গেইট পর্যন্ত ভরাট করে দোকান পাট নির্মাণ করেছে। পূর্ণমতি বাগান বাড়ী হইতে কান্দারপাড় গুংগুর নদীর সাথে সংযোগ খালটির অধিকাংশ ভরা করার হয়েছে। জরইন গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশের খালটিও ভরাট করে ফেলেছে স্থানীয় ভূমিদুস্যরা।

ভূমিদস্যুরা ড্রেজারের মাধ্যমে অধিকাংশ খাল ভরাট করে নির্মান করেছে ঘরবাড়ি ও দোকানপাট /ছবি: নতুন কুমিল্লা
স্থানীয় কৃষক রঞ্জু, কাদের ও জাব্বারসহ একাধি ব্যক্তি নতুন কুমিল্লাকে জানান, উপজেলার পয়াতের জলার ধান চাষ করে তাদের খাবারের অধিকাংশ চাহিদা পুরণ করে থাকে। কিন্ত উক্ত জলার পানি নিষ্কাশনের জন্য যে খাল ও নালা রয়েছে তা ভরাট হয়ে যাওয়া সামান্য বৃষ্টিপাত হলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে তাদের রোপন কৃত ফসল নষ্ট হয়ে যায়। এতে সারা বছর তাদেরকে কষ্টে দিন কাটাতে হয়।
অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের তহসিলদার মোঃ সফিকুর রহমানের বিরুদ্ধে। তিনি অর্থের বিনিময়ে কিছু ভূমি দস্যুর সাথে আতাত করার ফলে সদরে বিভিন্ন খাল ভরাট করে বহুতল ভবন নির্মাণসহ ঘর-বাড়ি তৈরী করা হয়েছে। তবে বিষয়টি অস্বীকার করে মোঃ সফিকুর রহমান নতুন কুমিল্লাকে বলেন তিনি এর সাথে কোনভাবেই জড়িত নয়।
বুড়িচং উপজেলা ভূমি অফিস সূত্র নতুন কুমিল্লাকে জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নে ছোট বড় ২০৩টি খাল রয়েছে। তার মধ্যে রাজাপুর ইউনিয়নে ১১০টি,বাকশীমূল ইউনিয়নে ৩টি, বুড়িচং সদর ইউনিয়নে ২৬টি, পীরযাত্রাপুর ইউনিয়নে ৩টি, ষোলনল ইউনিয়নে ৫টি, ময়নামতি ইউনিয়নে ৯টি, ভারেল্লা উত্তর ও দক্ষিণ ইউনিয়নে ১৬টি এবং মোকাম ইউনিয়নে ৩০টি খাল রয়েছে।
এই বিষয়ে বুড়িচং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল হাসান নতুন কুমিল্লাকে বলেন, পলিমাটি জমে ভরাট হওয়া খালগুলো পরিদর্শন করে প্রতিবেদন তৈরী করে পানি উন্নয়ন বোর্ডে জমা দেয়া হয়েছে। এলজিইডি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে খনন কাজের বাস্থবায়ন করা হবে। এডিসি রেভিনিউ নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রকল্প এলে খাল খনন শুরু হবে। তবে কবে নাগাদ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে এ বিষয়ে স্পষ্টভাবে কিছুই জানাতে জানেনি এই কর্মকর্তা।
কুমিল্লা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রেভিনিউ) মো. আসাদুজ্জামান নতুন কুমিল্লাকে বলেন, সরকারি খাল যদি কারো ব্যক্তিগত দখলে থাকে তাহলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা পরিদর্শন করে জেলায় উচ্ছেদের বার্তা প্রেরণ করলে কৃষকদের স্বার্থে সেটি দ্রুত কর্যকর করা হবে। এছাড়াও উপজেলায় মাটিজমে ভরাট হওয়া ১১টি খাল খননের জন্য মন্ত্রনালয়ে তালিকা পাঠানো হয়েছে। আশা করছি দ্রুত এর বাস্তবায়ন হবে।