স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও কুমিল্লা জেলার দক্ষিণ অঞ্চলের ডাকাতিয়া নদীর নাঙ্গলকোট উপজেলার বাংগড্ডা ইউপির অংশে পরিকোট গ্রামের পরিকোট বধ্যভূমি সংস্কার হয়নি এখনো । অযত্ম-অবহেলায় পড়ে আছে ওই বধ্যভূমি। দিনের বেলায় গরু চরনসহ মানুষের লাকড়ি শুকানোর স্থান এটি। মাঝে মধ্যে রাতে বসে মাদক সেবীদের আড্ডাখানা। গত ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধি দিবস উপলক্ষে মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করে দিবসটি পালন করেন উপজেলা প্রশাসনের ।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকিস্তানি সেনারা কুমিল্লা দক্ষিন অঞ্চলের লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট ও নোয়াখালী জেলার সেনবাগ উপজেলা থেকে শত শত মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। পাশাপাশি মা-বোনদের কেও ধরে এনে নির্যান্ত করে হত্যা করে। আবার জেন্ত মানুষকে গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে দিনের পর দিন।
ওই বধ্যভূমিতে নির্যাতিত মুক্তিযোদ্ধা ইব্রাহিম ভ‚ইয়া বলেন, আমি ৭ দিনের জন্য ভারতের কাঠালিয়া এলাকায় প্রশিক্ষণের জন্য যাই। যখন আমার মায়ের মৃত্যুর সংবাদ পাই। তখন ভাদ্রমাসের ১৫-১৬ তারিখে বাড়িতে আসি। খবর পেয়ে পাকহানাদার বাহিনীরা রাত ২টার সময় আমার বাড়ি ঘেরাও করে ভোর বেলায় আমাকে নিয়ে আসে ওই বধ্যভূমিতে। পরে মিলিটারিরা আমাকে এখানে একটি বটগাছের সঙ্গে বেঁধে নির্মমভাবে নির্যাতন চালায়।
১ দিন ১ রাত রাখার পর তারা নোয়াখালি সেনবাগ থেকে আরো ২ জনকে ধরে নিয়ে আসে। নোয়াখালি থেকে নিয়ে আসা ২ জনকে মেরে ফেলে। আমাকে হত্যার করার জন্য নিতে গেলে আমি ওই সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। রাস্তার এক পাশে আমাকে রেখে চলে যায় মিলিটারিরা। আমার জ্ঞান আসলে কোনোমতে পালিয়ে আসি মৃত্যুর কোল থেকে।
এলাকার সচেতন ব্যক্তিরা জানান, স্বাধীনতার ৪৮ বছরেও যারা দেশের জন্য জীবন দিয়েছে। এই পরিকোটে বধ্যভূমি তার প্রমাণ। তাদের স্মরণে আজও আমরা একটা স্মৃতিসৌধ নির্মাণ হয়নি। আগামী প্রজন্ম কিভাবে তাদের কথা স্মরণ রাখবে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হলে লাকসাম-নাঙ্গলকোট-চৌদ্দগ্রাম-সেনবাগ উপজেলা থেকে শত শত সাধারণ মানুষকে রাজাকাররা অত্যাচার করে। নারীদের নির্যাতন করে জেন্ত গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখে। দু’তিন দিন পর তার লাশ বস্তা ভরে বাংগড্ডা-চৌদ্দগ্রাম সড়কে পরিকোট এলাকায় বেইলি সেতুর পাশে নদীতে ফেলে দিত।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মাত্র কয়েকটি ইট দিয়ে তৈরি উপজেলার বাংগড্ডা ইউপির পরিকোট বধ্যভ‚মি। আশপাশের লোকজন বধ্যভূমি ঘেষা নদী থেকে অবৈধ ড্রেইজার মেশিন দিয়ে বালু তুলছে। ফলে যে কোনো সময় ধষে যাবে এ বধ্যভূমি। দিনের বেলায় গরু চরনসহ মানুষের লাকড়ি শুকানোর স্থান এটি। যাদের রক্তের বিনিময়ে ১৯৭১ সালে দেশ শ্রুত্রুমুক্ত হল, তাদের সম্মানে কিছু করতে না পারায় দুঃখ প্রকাশ করেন এলাকার একাধিক প্রবীণ ব্যক্তি।
এ ব্যাপারে সাবেক উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ইছহাক মিয়া নতুন কুমিল্লা.কমকে জানান, বধ্যভূমির পাশে জায়গা না থাকার কারণে স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লামইয়া সাইফুল নতুন কুমিল্লা.কমকে জানান, বর্তমান সরকার মুক্তিযোদ্ধা বান্ধপ সরকার। মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তে কেনা এ বাংলা। যার জন্য ৩০ লাখ শহীদ ও ২ লাখ মা-বোন নির্যাতিত হয়। আর পরিকোট বধ্যভ‚মি অযত্ম-অবহেলায় রয়েছে। এটি আমার নজরে এসেছে। এ বধ্যভূমিকে দ্রুত সংস্কার করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।